জাতীয় ডেস্ক : গত ২০ জুলাই দুপুরবেলা রাজধানীর চিটাগাং রোড এলাকায় গোলাগুলি ও সংঘর্ষ চলছিল।পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছিল পাল্টাপাল্টি ধাওয়া।মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ ও ককটেল বিস্ফোরণ চলছে।দুপুরে ভাত খেয়ে বাসা থেকে বের হয় ছোট্ট হোসেন মিয়া (১০) পপকর্ন, আইসক্রিম ও চকলেট ফেরি করে সে।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর থেকে খোঁজ নেই হোসেনের।বাবা মানিক মিয়া সন্তানের খোঁজে বের হন।কোথাও নেই।সংঘর্ষের কারণে অন্তত দুই ঘণ্টার উল্টো পথে এসে দেখেন, তাঁর ছেলে এখনো বাসায় ফেরেনি।বাসায় ছোট্ট দুই মেয়েকে তালাবন্দী করে মানিক মিয়া স্ত্রী মালেকা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে সন্তানের খোঁজে বের হন।চিটাগাং রোডসহ আশপাশের এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও হদিস মেলেনি হোসেনের।এরপর রাত নয়টার দিকে কেউ একজন এসে মুঠোফোনে হোসেনের ছবি দেখান। মানিক ও মালেকা সন্তানের আহত অবস্থার ছবি দেখে চিনতে পারেন।তাঁরা জানতে পারেন, হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।আর দেরি না করে স্বামী-স্ত্রী একটি পিকআপে করে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যান।সেখান গিয়ে আরও বিপদ।সড়কে কোনো গাড়ি নেই।কিছু সময় হেঁটে, কিছু সময় জিরিয়ে নিয়ে এগিয়ে চলেন।পথে পথে সংঘর্ষ।পরে এক রিকশাওয়ালাকে হাতে-পায়ে ধরে রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছান।ঢাকা মেডিকেলের সব জায়গা খুঁজে হোসেনকে পেলেন না।চিকিৎসকদের কাছে গেলে তাঁরা বলেন, চিটাগাং রোড এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অনেককেই আনা হয়েছে।আহত সবার চিকিৎসা চলছে।দিবাগত রাত দুইটা পর্যন্ত চিকিৎসা চলছে ভেবে স্বামী-স্ত্রী বসে ছিলেন।এ সময় একজন এসে জিজ্ঞাসা করেন, তাঁরা কেন এখানে বসে আছেন? পরে নিজের সন্তানের কথা বলেন।এ সময় লোকটা তাঁদের লাশঘরের কাছে নিয়ে যান।অনেকগুলো মরদেহের সঙ্গে ছোট্ট হোসেনের মরদেহ দেখে বাবা মানিক মিয়া জ্ঞান হারান। মা মালেকা বেগমের চিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে ঢাকা মেডিকেলের পরিবেশ।গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর হোসেনের মরদেহ ২২ জুলাই রাত দুইটার দিকে নানাবাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বারের রাজামেহার ইউনিয়নের বেতরা গ্রামে দাফন করা হয়েছে। নিহত হোসেনের মামা মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হোসেনদের পরিবার ঢাকায় থাকলেও তারার তেমন কিছু নাই।বাপ-পুতে ফেরি কইয়া যা পায়, তা দিয়ে তারার সংসারডা চলত।যহন হুনলাম হোসেনের লাশ লইয়া আইতাছে, আমডা কয়েকজন মিল্যা কাফনের কাফন কিনছি।দোকান বন্ধ আছিল।দোকানদাররে বাইত (বাড়ি) যাইয়া অনুরোধ করছি। তারপর কাফনের কাফড় আরও কিছু লইয়া আইছি।কেউ বাঁশ কাটছে, কেউ কবর খুঁড়ছে।সোমবার রাইত ২টার দিকে জানাজা দিয়া এরপর তারে কবর দিছি।পোলাডারে হারাইয়া বাপডা প্রতিদিন একবার বেহুঁশ হয়।
সত্যেরপথে.কম/সংগৃহীত
আপনার মতামত লিখুন :